লবিং এর নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান ও সকল ধরণের সহযোগিতা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে চিঠি দিয়ে দেশদ্রোহীতা করেছে বিএনপি।

আমেরিকায় ন্যাশনাল সিকিউরুটি ডিভিশন (এনএসডি) হলো বিচার বিভাগের একটি দপ্তর ।এর দপ্তরের কাজ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।আর এই বিভাগের অধিক্ষেত্রাধীন একটি আইন হল Foreign Agents Registration Act (FARA)। এই আইনটার মূল নাম হলো “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার জন্য এজেন্সি দ্বারা নিযুক্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নিবন্ধনের প্রয়োজনের জন্য একটি আইন”| এই আইনের আওতায় দেশি-বিদেশি ব্যক্তি বা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান (“foreign principal”) আমেরিকার কোন লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে (“agent of a foreign principal”) আমেরিকা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি উপস্থাপন করে মার্কিন মতামত, নীতিমালা, আইনকে প্রভাবিত করে । সহজ কথায়, এই FARA এর registration unit আমেরিকার লবিষ্ট ফার্মগুলোর মূল কর্মক্ষেত্র ।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে লবিষ্ট ফার্ম Akin Gump কে নিয়োগ দেয়। তাদের মাধ্যমে FARA registration unit-এ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বানোয়াট সব তথ্য দাখিল করে। এই ফার্মের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ৩৪৯২। এ কাজে Akin Gump ফার্ম টবি ক্যাডম্যান নামের এক আইনজীবী নিয়োগ করে । এই টবি ক্যাডম্যানকে লেখা চিঠি হতে জানা যায় যে, তিনি ওয়াশিংটনে বিএনপির “eyes and ears”। তাদের উদ্দেশ্য-

“to facilitate dialogue between the BNP and politicians in Washington (including in relation to the forthcoming election) and lobbying in relation to war crimes trials taking place in Bangladesh, and … human rights abuses in Bangladesh”

Akin Gump আরও দাবী করে যে,

“We have a strong relationship with Members of Congress as well as throughout Executive Branch …. have leading members of both the Republican and Democratic parties in our practice. We have worked closely with every major committee and subcommittee in the House and Senate, on both sides of the aisles, as well as with senior officials in virtually all Executive Branch agencies.”

এ চিঠিতে Akin Gump ফার্ম টবি ক্যাডম্যান-কে মাসিক ৪০,০০০ থেকে ১০০,০০০ মার্কিন ডলার দিয়েছে উপরন্তু, এ কাজ শুরুর জন্য বিএনপি তাদের কাছে রিটেইনার হিসেবে ১২০,০০০ মার্কিন ডলার জমা রাখে । ২০১৭ সালে এই রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়।

সম্ভবত প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপি এক সাথে দুটি লবিষ্ট ফার্ম নিয়োগ করে FARA এর Registration Unit বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরপর দুই বার ভুয়া তথ্য দাখিল করে লিষ্ট ফার্মের একটি বোস্টনের Rasky Partners (রেজিস্ট্রেশন নং ৬৫৮৬) এবং অন্যটি ওয়াশিংটনের Blue Star Strategies (রেজিষ্ট্রেশন নং ৬৫৮৭)। এবার বিএনপি দল হিসেবে না, আব্দুল সাত্তার নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে উভয় ফার্মের সাথে চুক্তি করে । ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে Rasky Partners এর সাথে আরো একটি চুক্তি করা হয় একই ব্যক্তির নামে। আব্দুল সাত্তারকে বিএনপি নিয়োগ করেছে কিনা প্রশ্ন হতে পারে। তাই Rasky Partners এর একটি লাইন দেয়া হলো-

“This material is distributed by Blue Star Strategies and Rasky Partners on behalf of Bangladesh Nationalist Party”,

এদের সাথে চুক্তিতে মাসিক মোট ৫০,০০০ মার্কিন ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদের উদ্দেশ্য –

“Rasky Partners will engage in message development, outreach to influencers, media monitoring, media relations, strategic counsel and research.”

এছাড়া ২০১৯ সালে বাংলাদেশের কুৎসা রচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষর করা গাদা গাদা চিঠি পাওয়া যায়। তিনি আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে শুরু করে “House Committee on Foreign Affairs”, “Senate Appropriations Subcommittee on State, Foreign Operations and Related Programs”, “Senate Committee on Appropriations”, “House Committee on Appropriations”, “Senate Committee on Foreign Relations”, “Senate Subcommittee on Near East, South Asia, Central Asia, and Counterterrorism”, “House Foreign Affairs Subcommittee on Asia, the Pacific, and Nonproliferation” ইত্যাদিতে দফায় দফায় চিঠি লিখেছেন।

তিনি লিখেছেন-

“We are APPRECIATIVE to the U.S.State Department for its recent annual Human Rights Report on Bangladesh and its comprehensive detailing of human rights abuses committed by the ruling parties”.

তার মানে, দেশের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদনের জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। আরেকটি চিঠিতে তিনি লেখেন,

“…we strongly urge you to consider opportunities to raise questions that REVIEW U.S. AID AND FOREIGN ASSISTANCE to Bangladesh”. অর্থাৎ, বাংলাদেশে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করা হোক।

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-ও লবিস্ট নিয়োগ ও পয়সা খরচের বেলায় পিছিয়ে থাকেনি। জামায়াতের ৪-টি ফাইল পাওয়া যায়- ২০১৪ সালের রেজিস্ট্রেশন নং-৬২১৮ ও ৬২১৯, ২০১৫ সালের রেজিস্ট্রেশন নং-৬২৭২, ২০১৬ সালের রেজিস্ট্রেশন নং-৬৩৩৬ এবং ২০১৮ সালের রেজিস্ট্রেশন নং-৬৫১৭।

অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যায় তারা একের পর এক ব্যর্থ হয়ে লবিষ্ট ফার্ম বদলেছে । এদের ওয়াশিংটনভিত্তিক লবিষ্ট ফার্মগুলো যথাক্রমে KG Global, Cassidy & Associates, Cloakroom Advisors, Husch Blackwell Strategies। সবগুলো চুক্তিতে প্রতিষ্ঠানের নাম দেয়া আছে “Organization for Peace and Justice”. এটি নিউইয়র্কের একটি non-stock corporation. জামায়াতের পক্ষে চুক্তিগুলিতে স্বাক্ষর করেছে এক জিয়াউল ইসলাম । প্রশ্ন উঠতে পারে, এ প্রতিষ্ঠান জামাতের কি না। প্রতিষ্ঠানটির পরিচয় হলো-

“Sympathizers of the Jamaat-i-lslami political party are directors/ employees of Organization of
Peace and Justice Inc., and the mission of the principal benefits the party and its members in Bangladesh”|

এই সব লবিষ্ট ফার্মদের চারটি প্রধান উদ্দেশ্য-

এক) বাংলাদেশ সরকারের ওপর মার্কিন সরকারের চাপ বৃদ্ধি করা
দুই) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ও আইসিটি ট্রাইব্যুনালকে বন্ধ করতে মার্কিন কংগ্রেস-কে সম্পৃক্ত করা
তিন) আইসিটি ট্রাইব্যুনাল বিরোধী নীতিমালা প্রনয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এবং
চার) মানবাধিকার লংঘনবিষয়ক প্রশ্নে মার্কিন সরকারকে সম্পৃক্ত করা
এ জন্য জামাত Husch Blackwell Strategies-কে বাৎসরিক ১৩২,০০০ মার্কিন ডলার ও Cassidy & Associates-কে মাসিক ৫০,০০০ মার্কিন ডলার দিয়েছে।

এখানে কমেন্ট করুন: