স্টাফ রিপোটার:নরসিংদীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। কথিত বড়ভাইদের আশীর্বাদে বিভিন্ন অস্ত্র প্রদর্শন থেকে শুরু করে মাদকে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ার বিষয়টি সমাজের চিন্তাশীল মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভাবিয়ে তুলেছে। কিশোর গ্যাংএর হাত থেকে সাধারন মানুষ সহ বাদ যাচ্ছে না গনমাধ্যম কর্মী।গত কয়েক মাসে নরসিংদী শহর সহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, ডাকাতি চুরি ছিনতায় ধর্ষণ নির্যাতনসহ একাধিক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলা হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।পলাশে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের এক কিশোরকে নির্দয়ভাবে পেটাচ্ছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি, বেলা ১১টা ২ মিনিট। রামদা ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই কিশোর ধাওয়া করছে তিন কিশোরকে।
এ চিত্রটি ছিল নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরের। কর্মব্যস্ত সময়ে প্রকাশ্যে কিশোরদের অস্ত্রের মহড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের মাঝে। এ ঘটনার কয়েক দিন পর ৮ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আরেক সরকারি দপ্তর উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে সংঘর্ষে জড়ায় স্কুল ইউনিফর্ম ও সাধারণ পোশাক পরা দুই দল কিশোর। তাদের নিবৃত্ত করতে গিয়ে আহত হন শিবপুরের মফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আওলাদ হোসেন।সচেতন সাধারণ নাগরিক হিসেবে কিশোরদের অস্ত্রের মহড়ার ওই দুটি ঘটনায় চরমভাবে মর্মাহত হন শিক্ষক আওলাদ হোসেন।
তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে শিবপুর থানার ওসির কাছে অপরাধপ্রবণতা রোধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অস্ত্রের মহড়ার সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ লিখিত আবেদন করেন। শিবপুরে সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের অস্ত্রের মহড়া, সংঘর্ষ ও ভাঙ্গচুরসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়। তারপরও অস্ত্রধারী সেই কিশোরদের গ্রেপ্তারে পুলিশ উদ্যোগী হয়নি। আর পুলিশের এ নিষক্রিয়তার সুযোগে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। যার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গত সোমবার রাতে প্রতিপক্ষ কিশোর সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে শেখ রাসেল শিশু-কিশোর স্মৃতি সংসদের শিবপুর পৌরসভা শাখার সভাপতি নাঈম মিয়াকে। নাঈম হত্যার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে শিবপুরে কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিবপুরে মূলত তিনটি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। ধানুয়া এলাকার আলী, শিবপুর বাজার এলাকার সাদ্দাম ও বান্দারদিয়া এলাকার সৈকত কিশোর গ্যাংগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা পান থেকে চুন খসলেই মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে শিবপুরে মহড়া দেয়। স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ নিয়মিত।এ ছাড়াও নরসিংদী শহরে বর্তমানে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং রাস্তায় প্রকাশ্যে গালি গালাজ দিচ্ছে সাধারন মানুষকে যা পাচ্ছে নিয়ে যাচ্ছে। দিচ্ছে হত্যার হুমকি তাদের হাত থেকে সাধারন মানুষ সহ বাদ যায়নি গনমাধ্যম কর্মী তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ থাকলেও গ্রেফতার করছেনা পুলিশ। যার ফলে বেপরোয়া হয়ে উঠচ্ছে তারা। কিশোর গ্যাং সদস্যরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধে জড়াচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া রাখিল। তিনি বলেন,এসব কিশোর গ্যাং বিভিন্ন রাজনৈতিক ছত্রছায়ার আড়ালে তাদের অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিজেদের প্রয়োজনে রাজনীতিবিদরাও তাদের ব্যবহার করছেন। আমরা অবিলস্বে নাঈম হত্যার বিচার চাই আর যাদের ছত্রছায়ায় এসব কিশোর গ্যাং পরিচালিত হচ্ছে তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।কেবল শিবপুর নয়,নরসিংদী শহরজুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন অবিজ্ঞ মহল। এক সময়ের শহরকেন্দ্রিক এ সমস্যা এখন কম-বেশি সারা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান শুরু হলেও বর্তমান সময় তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। এক সময় নরসিংদী শহরে উঠতি বয়সের তরুণদের মধ্যে নানারকম সমাজকল্যাণমূলক কাজের প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যেত, আর এখন শহর-পাড়া মহল্লায় উঠতি বয়সের তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ একত্র হয়ে গ্যাং তৈরি করে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আধিপত্য বিস্তার ছাড়াও বিভিন্ন তুচ্ছ ঘটনায় গ্রুপে গ্রুপে চলছে হাতাহাতি-মারামারি।
কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন সময়ে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।এমন অভিযান অব্যাহত না থাকলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে সবার ঘরে ঘরে গিয়ে কিশোরদের সংশোধন করার কাজটি যে কঠিন, তা বলাই বাহুল্য। কিশোররা যাতে অপরাধে জড়াতে না পারে সেজন্য অভিভাবকদের কঠোর হতে হবে।শিক্ষকরাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। নিম্নবিত্ত পরিবারের কিশোর, যারা নানাভাবে বঞ্চিত, তাদের অনেকে হতাশা থেকেও নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে।
নানারকম প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে এ শিশু-কিশোরদের সম্পদে পরিণত করার পাশাপাশি তাদের উন্নত মূল্যবোধের দীক্ষা প্রদানে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হলে তাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখা সহজ হবে। এ ক্ষত সমাজদেহে ব্যাপকভাবে বিস্তারের আগেই সবার এগিয়ে আসা উচিত।কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন,শিবপুরে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ রুখতে ইতিমধ্যে থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগরই নরসিংদী শহর সহ বিভিন্ন মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।