হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। শনিবার দিবাগত রাতের ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সহকারী শেখ নাজমুল হক সৈকত এবং মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শেখ নাজমুল হক সৈকত জানান, শনিবার রাতে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। রাতের সাড়ে ১০টার দিকে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। পরে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রাতের ১১. ৪৫ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আনোয়ার হোসাইন বলেন, আমরা ধারণা করছি তিনি (শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তিনি আগে থেকেই ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে সিএমএইচে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম ও নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
পরে দাফন ও জানাজার বিষয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেন, উনার করোনাভাইরাসের নমুনা নেওয়া হয়েছে। সকাল ১১টায় রিপোর্ট আসবে। এরপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মতিউর রহমান এবং মা রাবেয়া খাতুন।
চার ভাই তিন বোনের মধ্যে আব্দুল্লাহ দ্বিতীয়। তিনি স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পবিত্র কোরআন হেফজের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এর পর একই মাদ্রাসার কওমী ধারায় পড়াশুনা করেন।
সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুলতানশাহী কেকানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাসের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। খুলনার আযম খান কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন শেখ মো. আব্দুল্লাহ। তিনি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। গত শতকের ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে ছয়দফার উত্তাল আন্দোলন চলছিল । এ সময় ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন ।
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।