নরসিংদীতে প্রায় ২৫ লাখ লোকের বসবাস। এর মধ্যে জীবিকা ও শিক্ষার প্রয়োজনে ঢাকায় বসবাস করেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ। যাদের মধ্যে অনেকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই ফিরছেন নিজ গ্রামে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক রোগী। তাই দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। হাসপাতালগুলোতে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি নরসিংদী সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিলেও হাসপাতালের পরিবেশ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

প্রতিদিন নরসিংদীতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত দুইদিনে শুধু নরসিংদী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন রোগী। ফলে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে জেলাজুড়ে।

ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক বাড়লেও সরকারি সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নেই রক্তের সেল কাউন্টার মেশিন। তাই রোগীদের বাধ্য হয়েই বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ছুটতে হয়।

রোগীদের অভিযোগ, ডেঙ্গু শনাক্তে রক্ত পরীক্ষায় সরকার নির্ধারিত ফি নেয় না ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। নির্ধারিত ৫০০ টাকার ফি ২৬০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। এ অবস্থায় রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জেলা সিভিল সার্জন অফিস। উল্টো নরসিংদী সদর হাসপাতাল থেকে রোগীদের পাঠানো হয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সাধারণ রোগীদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী ডেঙ্গু রোগীদের মশারির ভেতরে রাখার কথা থাকলেও মাশারি ছাড়াই তাদের রাখা হয়েছে। যা খুবই ঝঁকিপূর্ণ। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন রোগীরা।

রোগীদের দাবি, আমরা যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তাদের মশারির ভেতরে রাখা হোক। সেই সঙ্গে আমাদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হোক। এ অবস্থায় থেকে আমরা আরও অসুস্থতা বোধ করছি।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে, মূল ভবনের সামনে-পেছনে পানি জমে আছে। এগুলো নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যেখানে চিকিৎসকরা বলছেন এডিস মশা জন্ম নেয় জমে থাকা পরিষ্কার পানি থেকে। সেখানে নরসিংদী সদর হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে জমে আছে পানি। দেখা গেছে নোংরা পরিবেশ।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ফারিয়া আক্তারের মা বিলকিস বেগম বলেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করলেও সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের কোনো ব্যবস্থা নেই। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছি আমরা। ৫০০ টাকার ফি নেয়া হয়েছে ২৬০০ টাকা।

মাধবদীর রায়পুর মার্কেটের নিরাপত্তা কর্মী নাদিম বলেন, প্রচণ্ড জ্বর ও মাথা ব্যথা নিয়ে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। পরীক্ষার পর আমার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এখানে আমাদের জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্য রোগীদের সঙ্গেই আমাদের রাখা হয়েছে। আমাদের জন্য মশারির ব্যবস্থা করা হয়নি।

নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) এমএন মিজানুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেবা দেয়া হয়। ডেঙ্গু নির্ণয়ে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এর বাইরে বেশি টাকা রাখার সুযোগ নেই। আমরা যদি সহজ ও সুন্দরভাবে ডেঙ্গুর চিকিৎসা করতে পারি এবং রোগীকে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা দিতে পারি তাহলে আতঙ্কের কিছু নেই। ডেঙ্গু সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে জ্বর আসলেই মানুষ হাসপাতালে আসছেন। ফলে ডেঙ্গু রোগে মৃত্যুহার কমে আসছে।

নরসিংদীর সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সৈয়দ আমিরুল হক শামীম বলেন, হাসপাতালে রক্তের সেল কাউন্টার মেশিন নেই। আমরা দরিদ্র রোগীদের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে সেল কাউন্টার করে দিচ্ছি। হাসপাতালে প্রতি রোগীকে ২৪ ঘণ্টা মশারিতে রাখার নির্দেশ দেয়া আছে। ডেঙ্গু রোগীদের বেশির ভাগই ঢাকাতেই আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী বেশি। ডেঙ্গু যাতে বিস্তার না করতে পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। নরসিংদীকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য বিভাগ সমন্বিত চেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণকে সচেতন করার জন্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো হবে।

এখানে কমেন্ট করুন: