গত ৯ মে শনিবার ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমতো হাইকোর্ট বিভাগ সময়ে সময়ে এ বিষয়ে প্রাকটিস নির্দেশনা বিশেষ বা সাধারণ জারি করতে পারবে।এর ফলে অডিও ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়।

আর জারি করা প্রাকটিস নির্দেশনা বিশেষ বা সাধারণ সাপেক্ষে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষগণ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্রিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীগণের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিতক্রমে যে কোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণ বা যুক্তিতর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় প্রদান করতে পারবে বলেও অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়। এই আদেশের পর রোববার অনুষ্ঠিত ফুল কোর্ট সভার পর বেঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে গতকাল প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের ৯৩ জন বিচারপতির অংশগ্রহণের ফুল কোর্ট সভা হয়। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, ওই অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রুলস প্রনয়ণ কমিটির তৈরি করা প্রাকটিস ডাইরেকশন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য তৈরি করা প্রাকটিস ডাইরেকশন ফুল কোর্ট সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

এতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আইনজীবীরা কিভাবে মামলা দায়ের করবেন, ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কিভাবে শুনানিতে অংশ নেবেন সেসব ব্যবহারিক বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা রয়েছে। হাইকোর্টের তিন বেঞ্চ, বসবেন চেম্বার আদালত:আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল আলম ভূঞা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ রোধ কল্পে এবং শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে সাধারণ ছুটিকালীন ও আপিল বিভাগের অবকাশকালীন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এবং এই কোর্ট কর্তৃক জারিকৃত প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুসরণ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে আপিল বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য চেম্বার জজ হিসেবে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানকে প্রধান বিচারপতি মনোনয়ন প্রদান করেছেন।

বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান আগামী ১৪ ও ২০ মে সকাল সাড়ে ১১ টা হতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে চেম্বার কোর্টে শুনানি প্রহণ করবেন।অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্টার (প্রশাসন ও বিচার) মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ভূইয়া স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধ কল্পে এবং শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে সাধারণ ছুটিকালীন ও হাইকোর্ট বিভাগের অবকাশকালীন এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই অধ্যাদেশ এবং এই কোর্ট কর্তৃক জারি করা প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুসরন করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য প্রধান বিচারপতি নিম্নরূপ বেঞ্চসমূহ গঠন করেছেন।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অতি জরুরী সব ধরনের রিট ও দেওয়ানী মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন। অতিজরুরী সব ধরনের ফৌজদারী মোশন এবং তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র গ্রহণ করবেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার সাকশেসন আইন, অ্যাডমিরালিটি কোর্ট আইন, ব্যাংক কোম্পানী আইনসসহ কয়েকটি আইনের অধীনে আবেদনপত্র গ্রহণ ও আপিল শুনানি গ্রহণ করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। তবে এতে আদালতের সময়সূচী উল্লেখ নেই। অধস্তন আদালতে শুধু জামিন শুনানি: এ দিকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে জরুরি জামিন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে ছুটিকালীন আদালতের কার্যক্রম পরিচারণা করা প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস রোগের সংক্রমণ মোকাবেলায় এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধ কল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ১৬মে পর্যন্তসকল আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছুটির সময়ে (সাপ্তাহিক ও সরকারি বর্ষপঞ্জিতে ঘোষিত ছুটি ছাড়া) বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ, শিশু আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা “আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এবং উচ্চ আদালতের জারি করা “বিশেষ প্রাকটিস নির্দেশনা” অনুসরণ করে শুধু জামিন সংক্রান্ত বিষয় সমূহ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
সুত্র দৈনিক প্রথম আলো

এখানে কমেন্ট করুন: