স্টাফ রিপোটার:সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমলো ১৬%, কর্মীরা ক্ষুব্ধ। করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় ১৬ শতাংশ বেতন-ভাতা কমিয়েছে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক লিমিটেড। বেতন কমানোর এই সিদ্ধান্ত চলতি বছরের ১ জুন থেকেই কার্যকর হবে। বহাল থাকবে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন ব্যাংকের অর্ধশত জ্যেষ্ঠ কর্মীকে ডেকে বেতন কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় সর্বস্তরের কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
এজন্য সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ কর্মী। তবে নিচের স্তরের ১০ শতাংশ কর্মী মনে করেন চাকরিচ্যুত না করে বেতন কমানোই তাদের জন্য ভালো হয়েছে।
সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, মুনাফা করার জন্য নয়, চলমান পরিস্থিতিতে লোকসান ঠেকাতে কোনো কর্মীকে ছাঁটাই না করে ১৫ শতাংশের একটু বেশি বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিটি ব্যাংক সুত্রে জানা গেছে, ৪ হাজার ৫০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রদানে সিটি ব্যাংকের বছরে ব্যয় হয় ৫৪০ কোটি টাকার মত। চলতি বছরের জুন মাস থেকে বেতন-ভাতা প্রায় ১৬ শতাংশ কমানো হলে বছরে খরচ কমে যাবে ১০০ কোটি টাকা। কমে যাওয়া ১৬ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ৬ শতাংশ। কর্মীদের ১৬শতাংশ কম বেতন-ভাতা নিতে হবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসময় এমডি আরও জানিয়ে দিয়েছেন আগামী বছর (২০২১ সালে) সিটি ব্যাংক পারফরমেন্স বোনাস ও ইনক্রিমেন্ট দেবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বেতন-ভাতা কমানোর জন্য ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন দায়ী। আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় সিটি ব্যাংক ২০১৯ সালে ৮৪০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০২০ সালে মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫০ কোটি টাকা। গত ৫ মাসে ২৩৫ কোটি টাকার মুনাফা হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে কর পরবর্তী মুনাফার পরিমানও ৯১ কোটি টাকা।
কর্মীদের দাবী কোনো প্রতিষ্ঠানের লোকসান হলে কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানো ন্যায় সঙ্গত। চেয়ারম্যান ও এমডি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বেতন কমিয়ে দিলেন। ফলে ৯০ শতাংশের অধিক কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা জন্মেছে। বেতন যদি কমাতেই হয় সেটা এত তাড়াহুড়া করে কেন। ঋণ-আমানতের ৯-৬ সুদহার বাস্তবায়ন ও করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারত।
এসব কর্মকর্তাদের দাবী ভালো কর্মীরা সুযোগ পেলেই সিটি ব্যাংক ছাড়বে। যাদের শ্রমে ঘামে ব্যাংক মুনাফা করে তারা চলে গেলে ব্যাংকের বিশাল ক্ষতি হবে। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এবং বাড়তে থাকবে তাতে সংসার চালানো কষ্টকর হবে। কর্মীরা অভাবেও পড়তে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কর্মীদের পরিশ্রমের ফল হচ্ছে ব্যাংকের মুনাফা। কর্মীদের স্বার্থ বিরোধী এ ধরণের সিদ্ধান্ত ব্যাংকের জন্য ক্ষতি ছাড়া ভালো বয়ে আনে না। বেতন ভাতা কমানোর ফলে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হবে গ্রাহক মানসম্মত সেবা পাবে না। বেতন-ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদকে বিবেচনার আহবান জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত তিনমাস ধরে আমাদের সবধরণের ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রয়েছে। ঋণের সুদ ৯ শতাংশ করা এবং করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতি হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা বিল পরিশোধ করছেন না। আমরা মুনাফা করার জন্য নয়, লোকসান না করে টিকে থাকার জন্য প্রায় ১৬ শতাংশ বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা কোনো কর্মীকে ছাঁটাই করতে চাই না। ১লাখ টাকা বেতনধারী কর্মকর্তার ১৫ হাজার টাকা বেতন কমলেও তিনি চলতে পারবেন। কিন্তু যদি চাকরি চলে যায় তাহলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমাদের কর্মীরা ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আগের সুযোগ-সুবিধা ফিরে পাবে।সুত্র:বার্তা২৪.কম