মো. হৃদয় খান: নরসিংদী রায়পুরায় আয়েশা খাতুন (৬৫) নামে এক অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধার কাছে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাইফুল ইসলাম রুদ্র (২৮) নামের এক কথিত ভূয়া সাংবাদিককে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। রবিবার বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে রায়পুরা থানায় দায়েরকৃত মামলায় নরসিংদী ডিবি পুলিশের এস আই আব্দুল গাফফার, পিপিএম ও তার সঙ্গীয় ফোর্স তাকে আটক করে। এসময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন মিডিয়ার ৮ টি আইডি কার্ড, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সিল ও বিভিন্ন জেলাবাসীর ৪১ টি মূল জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।

নরসিংদী ডিবি পুলিশের এস আই আব্দুল গাফফার জানায়, আয়েশা খাতুন (৬৫) গৃহহীন এক অসহায় বৃদ্ধা। রায়পুরা থানার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলো। সপ্তাহে ২-৩ দিন কাওরান বাজারে ফেলে দেয়া সবজি টোকায় এবং সেগুলোর বিক্রি করে কোনোরকম জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। আনেককাল আগে এক প্রতিবেশী আঠারো হাজার টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তাকে তিনগন্ডা জমি দিয়েছিল। সম্প্রতি তাকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করে দেয়া হয়। বিচার পেতে ডিবি পুলিশের সহায়তার আশায় পুলিশ সুপার নরসিংদীর শরনাপন্ন হয়। এদিকে রাস্তায় খদ্দেরের আশায় টোপ পেতে অপেক্ষায় এই ‘সাইফুল ইসলাম রুদ্র’। ডিবি অফিসার পরিচয়ে ঝোপ বুজে কোপ! দরখাস্ত নিজের বরাবর নিজেই দাখিল করলেন। ডিবি টিম নিয়ে তদন্তে যাবেন, টাকা-পয়সা খরচ হবে, বিচার পাইয়ে দিবেন আশ্বাস দিয়া বিদায় করেন বৃদ্ধাকে।

দুই রোজার দিন সন্ধায় ফোন করে পাঁচ হাজার টাকা রেডি রাখতে বলেন বৃদ্ধাকে। পরদিন সকালে টিম নিয়ে আসছেন জানিয়ে দেয়। এদিকে আয়েশা খাতুন ও তার মেয়ে অনাহার অর্ধাহারে চলছে, এত টাকা পাবে কোথায়? তবে পাচ হাজার খরচ করে জমি ফেরত পাবার আশায় আলো জ্বলছিলো চোখে মুখে। অবশেষে মেয়ের গলার চার আনা স্বর্নের চেইন বন্ধক রাখলেন পাচহাজার টাকার বিনিময়ে।

কথা রেখে যথা সময় হাজির হলেন ভূয়া সাংবাদিকের তদন্ত টিম। তবে গাড়ি ফোর্স না দেখে বৃদ্ধা মহিলা কিছুটা সন্দেহ করলেন। এটা আবার ক্যামন ডিবি! ফোর্স পেছনের গাড়িতে আসতেছে বলে তিনি তিন হাজার নিয়ে এবং বাকি দুই হাজার ফোর্সকে দিতে হবে বলে কেটে পড়েন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে আয়েশা খাতুন, ঘন্টার পর ঘন্টা যায় কিন্তু ডিবি পুলিশের ফোর্স আর আসেনা!

৩ রোজা থেকে শুরু করে ওই বৃদ্ধা মহিলা ও তার মেয়ে অসহায়ভাবে দিনের পর দিন উপজেলা মোড়ের অলিতে-গলিতে পাগলের মতো সাইফুল ইসলাম রুদ্রর চক্কর কাটতে থাকে। কান্নাকাটি করেও মন গলাতে পারে নি তার। উল্টো খেতে হয়েছে হুমকি ধমকি। অবশেষে কোনো উপায় না পেয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় পুলিশ সুপারের শরনাপন্ন হন। সব খুলে বলেন। এ বিষয়ে বৃদ্ধা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করলে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন জানায়, সে বিভিন্ন সময় ভূয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিলো। আটকের পর তার কাছ থেকে বিভিন্ন মিডিয়ার ৮ টি আইডি কার্ড, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সিল ও বিভিন্ন জেলাবাসীর ৪১ টি মূল জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।

এখানে কমেন্ট করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *