মো: শফিকুল ইসলাম মতি, নরসিংদী : নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্যা সাইফুল আলমকে হাইকোর্টে জামিন পাওয়া আসামি লিটন মিয়ার জামিনের বেলবন্ড (মুচলেকা) গ্রহণ না করার ঘটনায় ব্যাখ্যা দিতে তলব করেছেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার তাকে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। ২৪ জুলাই বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহমুদুল আহসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। বুধবার এ আদেশের লিখিত অনুলিপি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে।
জানা যায়, নরসিংদীর শিবপুর মডেল থানায় মামলা নং ১১(৭)২০২১ ধারা ৩৯৬/৪১২ দ:বি: মামলায় আসামি লিটনকে হাইকোর্ট জামিন দেন ২৯ মে। উক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে জামিননামা গ্রহনের জন্য আসামির আইনজীবী নরসিংদীর ওই ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আবেদন দাখিল করেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট এখনো জামিনের মুচলেকা গ্রহণ করেননি। এ কারণে হাইকোর্টে জামিন পাওয়া আসামি লিটন এখনও কারাগারে রয়েছেন। বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনলে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করেন বিচারপতি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, মহামাণ্য হাই কোর্ট ক্রিমিনাল কেইস নং ৩৩১৬৬/২০২৩ মামলায় গত ২৯ মে আসামী লিটনকে ৩ মাসের অস্থায়ী জামিনের আদেশ দেন। যাহা ১২ জুন স্বাক্ষরিত। ১৪ জুন নরসিংদী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্মারক নং- ৭৯৪’তে প্রেরণ করে। এ প্রেক্ষিতে নরসিংদী জেলা আইনজীবি সমিতির সদস্য এড. এমরান সিদ্দিকী একইদিন বেলবন্ড গ্রহনের জন্য বিজ্ঞ আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০ হাজার টাকা বন্ডে অঙ্গীকারনামা গ্রহণপূব্বর্ক জামিন মঞ্জুর করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
যথারীতি বিধি অনুযায়ী বেলবন্ড কারাগারে প্রেরণ করে। উক্ত মামলায় মহামাণ্য হাইকোর্টে ক্রিমিনাল কেইস নং ৩৩১৬৬/২০২৩ইং মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশ না মানায় এড. সৈয়দ মাহমুদুল আহসান মহামাণ্য হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারক মি. এমডি সেলিম ও মি. রইস উদ্দিন খান সমন্বয়ে গঠিত আদালতকে অবগত করলে নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্যা সাইফুল আলমকে স্বশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের আদেশ প্রদান করেন।
এ প্রেক্ষিতে ৩ আগস্ট মহামাণ্য হাইকোর্টের বিজয়-৭১, ২ নং কোর্টে নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্যা সাইফুল আলম এর পক্ষে শুনানী করেন এড. শাহ মঞ্জুরুল হক এবং আসামী পক্ষের শুনানী করেন এড. মাহমুদুল হাসান। পরে বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের আদালতে নরসিংদীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোল্যা সাইফুল আলম স্বশরীরে হাজির হয়ে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেন। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবির দাবী হাইকোর্টের তলবের নোটিশ পাওয়ার পর আসামী লিটনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
এবিষয়ে নরসিংদী জেলা কারাগারের জেল সুপার আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামীর কাস্টরীর সাথে বেলবন্ডের মিল না থাকলে আমরা কোন আসামীকেই ছেড়ে দিতে পারিনা। সেমতে তার জামিন নামা কাস্টরির কাগজের ধারার মিল না থাকায় তাৎক্ষনিকভাবে আসামীকে ছেড়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বেলবন্ড সংশোধনীর জন্য সংশ্লিস্ট আদালতে প্রেরণ করার পর আদালত থেকে সংশোধন করে পাঠালে আসামীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই বা ছিলনা।
এবিষয়ে নরসিংদী জেলা আইন জীবী সমিতির সদস্য আসামী পক্ষের আইনজীবী এমরান সিদ্দিকীর মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি।