মো.শফিকুল ইসলাম মতি,নরসিংদী :
আমাকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহনের ভাই জুনায়েদ হক ভ‚ইয়া ওরফে জুনোসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ প্রধান পরিকল্পনাকারীর ভ‚মিকায় ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলার ইটাখোলা চত্বরে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মুহসীন নাজিরের সভাপতিত্বে সভায় সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লাসহ আরো বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভ‚ইয়া রাখিল প্রমূখ। নিজ বাসভবনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ ২৫ দিন পর রাজধানী ঢাকা’র একটি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হন হারুন খান।
সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন খান বলেন, শিবপুরে সকল অপকর্মের হোতা হচ্ছে আসাদ ও জুনো। স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহনের ছোট ভাই জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জুনো। আর আসাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং এমপি মোহনের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত। এরই সুবাদে ভূ‚মিদস্যু, সন্ত্রাসী, প্রাণঘাতী মাদক ইয়াবা ব্যবসাসহ পেশাদার খুনিদের লালন করছে তারা। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে জুট ব্যবসা, ভূমি জবর-দখলসহ সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আইনিভাবে যেন তাদের বিচার হয়।
হারুন খান আরো বলেন, শিবপুর থানার কাছেই আমার নিবাস। কার বাহুবলে বলিয়ান হয়ে সেখানে আমাকে গুলি করে হত্যা করার দুঃসাহস দেখিয়েছে এবং তারা কার সাথে চলাফেরা করে সকলেই তা জানেন। উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হওয়া সত্বেও তারা আমার বিরোধিতা করেছে। এছাড়া পুটিয়া ইউনিয়নে ক্ষমতার সর্বোচ্চ অপব্যবহার করে চলেছেন তারা। দলীয় নির্দেশনা বহির্ভূত এসব হীণমন্য কাজে তারা কার ছত্র-ছায়ায় লিপ্ত রয়েছে তা সবাই জানেন। এমপি মোহন’কে উদ্যেশ্য করে তিনি বলেন, এই হত্যা চেষ্টা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আমার পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরাফেরাসহ রাজধানীর অভিজাত হোটেল রেডিসনে আমোদ-ফুর্তি করে সময় পার করছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক মোহন। অভিযোগ করে আরো তিনি বলেন, এ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এমপি মোহনের ব্যক্তিগত কার্যালয় পুড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মৃধাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দাও জানান তিনি।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, এমপি মোহন এর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার নেপথ্যে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রেখেছিলেন হারুন খান। এরই পুরস্কার হিসেবে তিনি পেলেন গুলি আর উপজেলা নির্বাচনের বিরোধিতা। তাকে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য যারা গুলি করেছে তাদেরকেই দীর্ঘদিন ধরে লালন-পালন করে আসছে এমপি মোহনের ভাই জুনো।
এ বিষয়ে এমপি মোহনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নৌকা প্রতিকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করি।
এরপর ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ওরফে ডলার সিরাজ নামে পরিচিত ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। বিএনপি ও জামাতের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রেখে কেন্দ্র দখলসহ নৌকা প্রতিকের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার জয়লাব করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের বিরোধিতা করে পরাজিত হন ডলার সিরাজ। এরপর থেকে বিএনপি জামাতের লালন-পালনকারী এই ডলার সিরাজ এর বিরোধিতা আরো চরমে রূপ নেয়। স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উস্কানীসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে দলের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে আসছেন তিনি। হারুন অর রশিদ খানের গুলির ঘটনায় মামলা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে পুলিশ।
এছাড়া মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে আমাকে জড়িয়ে ব্যক্তিগত ও দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ প্রতিবাদ সভা করে যাচ্ছে তারা। সভায় হারুন খানের ঘটনার সাথে জড়িত বলে সন্দেহমূলক ভাবে আমাকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হয়েচে। তিনি আরো বলেন, উপজেলা আওয়ামীগের অফিসে আগুনের ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে। তাদের পুলিশের উপর কোন বিশ্বাস নাই। পুলিশ প্রশাসনসহ আমার দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে জনসমাবেশ করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ওরফে ডলার সিরাজ। শিবপুরের শান্তি-শৃংখলা নস্ট বা আর কোন হতাহতের ঘটনা ঘটলে এরজন্য ডলার সিরাজ নিজেই দায়ি থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ খানকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ চেয়ারম্যানের ছেলে আমিনুর রশিদ খাঁন তাপস বাদী হয়ে ৬জনকে আসামি করে শিবপুর থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।