প্রবল শক্তি নিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আছড়ে পড়েছে সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের উপকূলে। সুপার সাইক্লোন আম্পান কেড়ে নিয়েছে কমপক্ষে ছয়জনের প্রাণ। নিহতদের মধ্যে পিরোজপুরে একজন, পটুয়াখালীর দুজন, ভোলার দুজন ও সাতক্ষীরার একজন। ঘূর্ণিঝড় আম্পান এখন ১৪৮ কিলোমিটার বেগে সাতক্ষীরা শহর অতিক্রম করছে। আম্পানের প্রভাবে জেলায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।

আম্পানের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক ঘর-বাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে দেয়াল চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা শহরে মঠবাড়িয়া কলেজ এলাকায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে

মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির নাম শাহজাহান মোল্লা (৫৫)। তিনি উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের গিলাবাদ গ্রামের মৃত মজিদ মোল্লার ছেলে। মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজের পিছনে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

ইসমাইল হোসেন নামে এক স্থানীয় জানান, বুধবার সন্ধ্যার পরে তিনি কলেজের পেছনে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তার পাশের একটি বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে গলাচিপা উপজেলায় রাসেদ (৬) নামে এক শিশু ও কলাপাড়ায় শাহ আলম নামে সিপিপি’র এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ছয় বছরের শিশু রাসেদ মারা গেছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় জনগণকে সচেতন করতে গিয়ে মো. শাহ আলম মীর (৫৫) নামে একজন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে খেয়া পার হওয়ার সময় পানিতে পড়ে তিনি নিখোঁজ হন। পরে সন্ধ্যায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে চরফ্যাশন উপজেলায় সিদ্দিক ফকির (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। এ ছাড়া এক নারী গুরুতর জখম হয়েছেন।

বুধবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর কচ্ছুপিয়া এলাকার রেইনট্রি গাছ ভেঙে মাথায় পড়ে সিদ্দিক ফকির আহত হন। তাকে তাৎক্ষণিক চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠায়। পথেই তার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে একই সময় চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ইয়ানুর বেগমের (৩০) গায়ে সুপারি গাছ ভেঙে মাথায় আঘাত লাগে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন তার মাথায় প্রায় ২৫/২৬টি সেলাই লেগেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ভোলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে পড়ে রামদাসপুর চ্যানেল ৩০ যাত্রীসহ একটি ট্রলার ডুবে রফিকুল ইসলাম নামে একজন নিহত হয়েছে। তার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার মনিরাম এলাকায়। ওই ব্যক্তিসহ ৩০ যাত্রী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসেন। তারা লক্ষ্মীপুর জেলার মজুচৌধুরী ঘাট থেকে ট্রলার যোগে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ভোলায় আসে। ওই ট্রলার রাজাপুর সুলতানীঘাটের কাছে এলে ট্রলারটি ডুবে যায়। ওই সময় স্রোতের টানে ভেসে যান রফিকুল ইসলাম। পরে তার লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ইলিশা ফাঁড়ির ইনচার্জ রতন কুমার শীল। তিনি জানান, ট্রলার ডুবে যাওয়ার স্পটটি ছিল মেহেন্দীগঞ্জ সীমানায়।

আজ সন্ধ্যার পর সাতক্ষীরার সুন্দরবন এলাকায় তাণ্ডব শুরু হয়। ঝড়ের গতিবেগও বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাত সাড়ে ৮টায় এই রিপোর্ট লেখার সময়ও প্রচণ্ড বেগে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

এদিকে সাইক্লোন আম্পানের আঘাতে আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর ও চাকলায় বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। অপরদিকে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে।

এ ছাড়া সাতক্ষীরা শহরের সংগীতা মোড় এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই মধ্য বয়সী নারী শহরের কামালনগর এলাকার বাসিন্দা।

সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তার নাম পরিচয় জানা যায়নি।

এখানে কমেন্ট করুন: