ঈদ-উল-ফিতরের প্রাক্কালে আজ জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে জনগণের সহায়তায় সরকার যে সব কর্মসূচী চালু করেছে, তা বর্তমান সঙ্কট না যাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘যতদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে, ততদিন এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার সহ বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে করোনাভাইরাসের এই মহামারী সহসা দূর হবে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। যতদিন না কোন প্রতিষেধক টীকা আবিষ্কার হচ্ছে, ততদিন করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো আমাদের বাঁচতে হবে। জীবন-জীবিকার স্বার্থে চালু করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ইতোমধ্যে লকডাইন শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তো নয়ই।’
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবকে ঘিরে প্রাথমিকভাবে ২৬ মার্চ ১০ দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কোভিড-১৯ থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তা ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
একইসঙ্গে ২৬ এপ্রিল থেকে সরকার কিছু পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা যায়, ৭ হাজার ২শ’ কারখানার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার কারখানা খুলে দেয়ায় ঢাকার মতো বিভিন্ন শিল্প বেল্টে উৎপাদন শুরু হয়েছে। আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি হেলথ কোড এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সারাদেশে বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেডসহ) খুলে দেয়া হয়। ১০ মে থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাজার ও শপিংমল খোলারও অনুমতি দেয় সরকার ।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলকে ঘরে বসে ঈদের আনন্দ আপনজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার পাশাপাশি দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও সামর্থবানদের প্রতি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে আমি ঘরে বসেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানাই, এই দুঃসময়ে আপনি আপনার দরিদ্র প্রতিবেশি, গ্রামবাসী বা এলাকাবাসীর কথা ভুলে যাবেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনার যেটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। তাহলেই ঈদের আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে আপনার ঘর এবং হৃদয়-মন।’
তিনি বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমি সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাশাপাশি ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের যাঁরা সামনে থেকে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাদেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণসামগ্রী বিতরণসহ সরকারের নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তাঁদেরকেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।